Deprecated: Optional parameter $file declared before required parameter $force is implicitly treated as a required parameter in /home/ikrimikr/public_html/wp-content/plugins/google-document-embedder/functions.php on line 100
মেঘ রাজকন্যা - ইকরিমিকরি । আমাদের স্বপ্নরাজ্য
মেঘ রাজকন্যা

মেঘ রাজকন্যা

গল্প : কাকলী প্রধান
ছবি : শামীম আহমেদ

মেঘের দেশে ছিল এক মেঘ রাজকন্যা। মেঘের দেশে সে ঘুরে বেড়াত হেসে-খেলে নেচে-গেয়ে। কখনো মেঘ সখীদের নিয়ে ফুল তুলত, মালা গাঁথত। মেঘের দেশে কোথাও কোনো অভাব ছিল না। রাতে বসত হাজার তারার মেলা। দিনে বসত লক্ষ ফুলের বাজার। ফুলপরিরা ফুলের ডালি সাজিয়ে বসে থাকত মেলায়। কোনো ফুলপরির বেচাকেনা একটুকম হলে হয়তো সে মন খারাপ করে বসে থাকত। মেঘ রাজকন্যা সব ফুল কিনে নিত তার কাছ থেকে।

মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে একদিন রাজকন্যার চোখ পড়ল মাটিতে। অবাক হয়ে দেখে মাটি ফেটে চৌচির। আরো দেখে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে কারা যেন। এর আগে রাজকন্যা মাটি দেখেনি, মানুষ দেখেনি কোনো দিন। রাজকন্যা মেঘের ভেলা ছুটিয়ে দেয় অনেক জোরে। ছুটতে ছুটতে সোজা রাজপ্রাসাদে। রাজার সামনে এসে দাঁড়ায় রাজকন্যা। তারপর রাজার হাত ধরে বেরিয়ে আসে প্রাসাদ থেকে। মেঘ সরিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে বাবার কাছে জানতে চায়, বাবা, ওরা কারা! রাজা বলেন, এরা মানুষ।

রাজকন্যা আবার জানতে চায়, ওরা এমন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে কেন?

রাজা বললেন, ওখানে ভীষণ খরা। বৃষ্টি নেই, তাই ফসল হয় না। ওদের খাবার নেই।

রাজকন্যা অধীর হয়ে বলে, তাহলে চলো বাবা, আমরা ওদের খাবার দিয়ে আসি।

অবুঝ মেয়েকে নিয়ে রাজা বিপদে পড়লেন। মেঘরাজ্যের খাবার আর মাটিরাজ্যেও মানুষের খাবার এক হয় না। তবে এখন উপায়! রাজকন্যার বুক হাহাকার করে ওঠে। পরদিন খুব ভোরে রাজকন্যা আবার বেরিয়ে পড়ল। একটু করে ঘোরে আর একটুকরে নামে। নামতে নামতে মাটির খুব কাছাকাছি চলে এলো। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে পায় মানুষের কান্না। মানুষগুলো মেঘের দেশে তাকিয়ে কী যেন সুর করে গাইছে-মেঘ দে ছায়া দে জল দে…

বিষণ রাজকন্যা ফিরে আসে নিজের দেশে। বিড়বিড় করে বলতে থাকে-মেঘ দে ছায়া দে জল দে…

দুঃখ আর কষ্টে ক্লান্ত রাজকন্যা যায় বাবার কাছে। জানতে চায়, মেঘ দে ছায়া দে জল দে-এর মানে কী?

রাজা বলেন, মেঘের আছে ছায়া মেঘের আছে জল। জল পেলে ওদের মাটিতে ফসল ফলবে। ফসল হলে ওদের কান্নার অবসান হবে।

রাজকন্যা ব্যাকুলভাবে রাজার কাছে প্রার্থনা জানায়-তবে ওদের তুমি মেঘ দিয়ে দাও বাবা, জল দিয়ে দাও।

রাজা তার অবুঝ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, মাটিকে জল দিতে হলে আমাদের যে ঝরে যেতে হবে মা!

রাজকন্যা প্রশ্ন করে, কীভাবে ঝরে যেতে হবে বলো, আমি ঝরে যাব। রাজার বুক কেঁপে ওঠে। বাধা দিয়ে বললেন, তুমি নও। তোমার আগে অন্য অনেক মেঘ আছে, তাদের কেউ কেউ ঝরে পড়লেই হবে।

রাজকন্যা এবার অনঢ়। না বাবা, আমি ওদের দুঃখ ঘোচাতে চেয়েছি, তাই সবার আগে আমারই ঝরে পড়া উচিত।

বাবা-মেয়েতে চলে এক যুদ্ধ। বাবা বলেন, তিনি রাজা, তাই যেতে হলে তারই যাওয়া কর্তব্য।

রাজকন্যা নানা রকম যুক্তি দিয়ে বোঝাল, দেশের জন্য রাজার অনেক কর্তব্য পড়ে রয়েছে। তাই তার বেঁচে থাকাটা জরুরি।

অবশেষে কন্যার যুক্তির কাছে রাজা পরাজিত হলেন। হতাশ হয়েই পরাজয় মেনে নিলেন। রাতের অন্ধকারে বাবা আর মেয়েতে চলল পরামর্শ। খুব তাড়াতাড়িই প্রিয় রাজকন্যাকে হারাবার চিন্তায় শোকে পাগলপ্রায় রাজা। মেঘের দেশে তখনো সূর্যের আলো ফোটেনি।

পরামর্শ অনুযায়ী মেঘরাজা আর রাজকন্যা দুই দিক থেকে প্রচ- জোরে ছুটে এলো। শুরু হলো প্রচ- বাতাস। চমকে উঠল বিদ্যুৎ। হঠাৎই জেগে উঠল মেঘপুরী। মাটির মানুষ অবাক হয়ে দেখে মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। আনন্দে আত্মহারা তারা। এদিকে মেয়েকে হারানোর শোকে রাজার বুকফাটা আর্তনাদ চলছে-গুড়–ম গুড়–ম গুড়–ম।

ঘুম ভেঙে পুরো মেঘবাসী বুঝতে পারে ব্যাপারটা। প্রিয় রাজকন্যাকে হারাতে চলেছে তারা। আঁধার হয়ে গেছে মেঘরাজ্য। মেঘের কষ্টগুলো ধাক্কা খাচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে চোখ-ধাঁধানো আলো হয়ে নেমে যাচ্ছে মাটিতে। এমন সময় মেঘরাজার বুকে আছড়ে পড়ল মেঘ রাজকন্যা। আর অমনি রাজকন্যা জল হয়ে ঝরে পড়তে শুরু করল মাটির ওপর।

সেই থেকে বাবা মেঘরাজার বুক কেঁদে ওঠে মেয়ের জন্য থেকে থেকে। আর তখনই মাটিতে নেমে আসে মেঘের কান্না। মেঘের কান্না দিয়েই ভরে যায় নদী-নালা। মেঘের জলে মাটি ভরে যায় ফুল-ফল-ফসলে।

আপনার মতামত দিন

Shopping Cart