নৌকো ভরা কত মাছ - ইকরিমিকরি । আমাদের স্বপ্নরাজ্য
নৌকো ভরা কত মাছ

নৌকো ভরা কত মাছ

গল্প : তুষার আবদুল্লাহ
ছবি : নাজমুল আলম মাসু

পুকুরপাড়ে জামরুলগাছ। ঈদের ছুটি। দাদুবাড়িতে আনন্দের হুল্লোড় চলছে। সব ভাই-বোন চাচা-ফুফি এসেছে। ভাই-বোনেরা মিলে সবাই দৌড়ে গেল পুকুরপাড়ে। পুরো গাছ জামরুলে সাদা হয়ে আছে।

একটা ডাল ছুঁয়ে আছে পুকুরের জল। সবাই যখন জামরুল কুড়োতে ব্যস্ত, তখন দূর্বা দেখে পুকুর ছুঁয়ে থাকা ডালের নিচে ডুবে আছে একটা নৌকো।

নৌকোর ওপর আরো ডালপালা ছড়িয়ে রাখা আছে।

নৌকোটা এখানে কে ডুবাল?

দূর্বার মনে পড়ে, গতবার ঈদে এসে তো এই নৌকোয় চড়ে সারা দিন খালে-বিলে ঘুরে বেড়িয়েছিল ওরা।

দূর্বার খুব ইচ্ছে হলো ডুবে থাকা নৌকোটায় উঠে পড়তে। কিন্তু মায়ের বারণ আছে। ও যে সাঁতার জানে না।

দূর্বা পেছন ফিরে দেখে সবার মুঠোয় জামরুল হাসছে। আর হাসছে বাদল। ওর চাচাতো ভাই বাদলকে সবাই দস্যি বলেই জানে। গাছের ডালে ডালে, পুকুরে বাদল ঘুরে, ভেসে বেড়ায় সারা দিন। বাদলকে কাছে পেয়ে দূর্বা জানতে চাইল-ভাইয়া, নৌকো ডুবিয়ে রাখা কেন?

বাদল গড়গড়িয়ে পুকুরে নৌকোর ওপর গিয়েই ওঠে। বাদল বলে, মাছ আটকানোর জন্য নৌকো ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।

দূর্বা অবাক-মাছ তো জালে আটকায়। বাদল নৌকো থেকে ডালপালা সরাতে থাকে।

দূর্বা দেখে নৌকোর পানিতে অনেক মাছ লাফালাফি করছে। বাদল বলে, এই যে দেখো ডালপালা দেওয়া আছে। এসব মাছকে লোভ দেখানোর জন্য। মাছ ভাবে ওরা এখানে নিরিবিলি থাকতে পারবে। খাবারও পাবে এখানে। তাই মাছেরা এখানে চলে আসে।

দূর্বা একটুমন খারাপ করে, ওদের বোকা বানাও তুমি?

বাদলের হাতে তখন একটা টাকি মাছ। বাদল বলে, বড়শিতেও তো আমরা খাবারের টোপ ফেলি। টোপ না ফেললে সে মাছ ধরা যায় না। দূর্বা জানতে চায়, কী মাছ এটা?

বাদল মাছটা নৌকোর পানিতে ছেড়ে দিয়ে বলে, এটা টাকি মাছ। ও পানির মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিল। একসঙ্গে কয়েকটি মাছ তুলে নিয়ে বলে, এই দেখো এগুলো পুঁটি। ওদের লেজ দেখেছ, কেমন সোনালি? আর এটা হচ্ছে মলা। এই যে পিছলে পড়ে যেতে চাচ্ছে, সরু মুখ, ও হচ্ছে বাইন।

দূর্বার চোখে রাজ্যের বিস্ময়! জানতে চায়, ভাইয়া, সব ছোট ছোট মাছই নৌকোয় এসে আটকে পড়ে? বাদল হাত ডুবিয়ে কিছুক্ষণ কী যেন খুঁজে বেড়াল। তারপর বড় আকারের একটা শিং মাছ তুলে বলল-শিং, মাগুর, মেনি, খলসে, ফলি, কই বেশি আসে।

দূর্বা বলে, ওমা। এত এত মাছের নাম। আমি তো এত মাছ চিনিই না।

বাদল হাসতে হাসতে বলে, আমার পায়ে শিং ঘা মারছে।

দূর্বা ভয় পেয়ে বলে, ভাইয়া উঠে পড়ো, উঠে পড়ো শিগগিরই। বাদল হেসে বলে, ওরে বোকা, ওসবে আমার কিছুহয় না। এবার টেংরাও ভালো আটকা পড়েছে।

বাদল উঠে আসে নৌকো থেকে। দূর্বাকে বলে, তোমরা আসবে বলেই দিদুনৌকো ডুবাতে বলেছেন। দাদুতোমাদের মজার মজার তাজা মাছ রান্না করে খাওয়াতে চান। ঈদের দুই দিন পর নৌকো তোলা হবে। তখন দেখবে নৌকো ভরা কত মাছ।

দূর্বা বায়না ধরে, আমিও নৌকো থেকে মাছ তুলব। বাদল জামরুলে কামড় বসিয়ে বলে, দেখা যাক সেদিন তোমার জন্য দাড়িওয়ালা কোনো বোয়াল অপেক্ষা করে কি না নৌকোয়।

আপনার মতামত দিন

Shopping Cart