গল্প : সোহানা শফিক ছবি : বিপ্লব চক্রবর্তী
বিশাল একটা সাগর। সবুজ সবুজ নীল তার পানি, কূল নাই-কিনারা নাই। তারই মাঝে ছোট্ট একটা প্রবাল দ্বীপ। সেই দ্বীপে থাকে তিন বন্ধু-গাংচিল, ডলফিন আর কচ্ছপ।
গাংচিল নীল আকাশে উড়ে বেড়ায়। পাখা মেলে সবুজ দ্বীপটার চারদিকে চক্কর দিয়ে আসে।
ডলফিন সাগরের পানিতে সাঁতরে বেড়ায়, গভীর জলে লাল-নীল মাছেদের সাথে খেলা করে, মাঝে মাঝে লাফ দিয়ে চলে ঢেউয়ের আগে আগে।
কচ্ছপ সাগরেও সাঁতার কাটতে পারে, ডাঙাতেও হাঁটতে পারে। কিন্তু ধীরস্থির কচ্ছপ ডাঙার খুব বেশি ভেতরে যেতে পারে না। আবার সাগরেরও অনেক গভীরে সে যেতে পারে না। তাতে কী, কচ্ছপের মাথায় কিন্তু অনেক বুদ্ধি। সে গাংচিলকে বলে, দ্বীপে কোথায় কী হচ্ছে সব আমাকে বলো বন্ধু।
গাংচিল উড়ে উড়ে সারা দ্বীপে কোথায় কী হচ্ছে সব জেনে নেয় আর এসে বন্ধুকে বলে। ডলফিনকে সে বলে, সাগরের কী কী খবর বলো দেখি আমাকে!
ডলফিন সাগর ঘুরে ঘুরে খোঁজখবর নেয় আর এসে কচ্ছপকে জানায়।
তিনজন মিলে সাগরের পারে বসে প্রতিদিন বিকেলে খেলে আর কত কী গল্প করে।
এমনিভাবে শুধুকচ্ছপ না, ডলফিনের দ্বীপ নিয়ে অনেক কিছুজানা হয়, আর গাংচিল অবাক হয়ে শোনে গভীর সাগরের গল্প।
একদিন কচ্ছপের শরীর খুব খারাপ, সে খেলতে পারবে না। সাগরের পারে ভেজা বালুতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ পড়ে ছিল, জেলিফিশ ভেবে সেটাকে সে খেয়ে ফেলেছে। এর পর থেকে তার খুব পেট ব্যথা।
শুনে ডলফিন বলল, সাগরের নানা মাছদেরও নাকি এমন পেট ব্যথা হচ্ছে।
গাংচিল বলল, অনেক পাখিদেরও নাকি এমন হচ্ছে। লালনীল-কমলা পুঁতির মালা, রঙিন প্লাস্টিকের খেলনার টুকরা দেখে পাখিরা পাকা ফল ভেবে খেয়ে ফেলে, তখন অনেক পেট ব্যথা হয়।
তাহলে কী করা যায়? তিন বন্ধুপরামর্শকরে।
ডলফিন বলল, আমি দেখেছি মানুষের বাচ্চাদের মনে অনেক মায়া, ওরা ডলফিন, পাখি আর সব প্রাণী ভালোবাসে। ওদের বললে কোনো কাজ হতে পারে।
প্রবাল দ্বীপে সাগরের পাশেই ছিল একটা স্কুল। কচ্ছপ, ডলফিন আর গাংচিল একদিন সেই স্কুলে বাচ্চাদের কাছে গেল। খুলে বলল সব।
এ কথা শুনে ওরা সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গেল। বড় করে একটা মিটিং ডাকল দ্বীপের সব বাচ্চাদের নিয়ে। সেখানে বড়দেরও ডেকে আনলো ওরা।
ছোটরা বলল, আমরা ঠিক করেছি, আমাদের দ্বীপে এখন থেকে মাটিতে মিশে যায় না এমন কিছুকেউ ব্যবহার করব না। এমনকি প্লাস্টিকের খেলনাও না।
ওই দ্বীপের বড়রা খুব ভালো মানুষ ছিল। তারা ছোটদের খুব ভালোবাসত। মন দিয়ে ছোটদের কথা শুনল তারা। বলল, ঠিক আছে, তোমরা যা বলবে তাই হবে। আমরা ছোটবেলায় এমন কত খেলনা নিজেরা নিজেরা বানিয়ে খেলেছি!
বড়রা তখন কাঠের টুকরা, পোড়ামাটি, রঙিন কাগজ আর কাপড় দিয়ে তৈরি অনেক সুন্দর সুন্দর খেলনা বানিয়ে দিল! ছোটদেরও শিখিয়ে দিল কীভাবে বানাতে হয়! বাচ্চারা অনেক খুশি হলো সেসব খেলনা পেয়ে!
সবচেয়ে বেশি খুশি হলো ডলফিন, গাংচিল আর কচ্ছপ। ডলফিন প্রবাল দ্বীপের গল্প সাগরের সব মাছকে জানিয়ে দিল। মাছেরা সে গল্প ছড়িয়ে দিল-সাগর থেকে মহাসাগরে! গাংচিলও এই গল্প সব পাখিকে জানিয়ে দিল। পাখিরা উড়ে উড়ে তা ছড়িয়ে দিল-দেশ থেকে মহাদেশে!
এখন বিকেল হলেই ডলফিন কচ্ছপকে পিঠে নিয়ে সাগরে বেড়াতে বের হয়। আর তাদের মাথার ওপরে উড়ে চলে গাংচিল!