খাবারের গুদামে কে? - ইকরিমিকরি । আমাদের স্বপ্নরাজ্য
খাবারের গুদামে কে?

খাবারের গুদামে কে?

গল্প : সুলতানা লাবু
ছবি : নাজমুল আলম মাসুম

খাবার গুদামে ঢুকেই ডোমা সর্দারের চোখ ছানাবড়া। এ কী! খাবার কমে গেল কী করে! ক’দিন আগেও গুদাম ভরা ছিল। পাহারাদার ডোমা পিঁপড়েগুলো সাবাড় করে দিচ্ছে না তো? খুব রেগে গেল সর্দার ডোমা। ডাক পড়ল পাহারাদার ডোমাদের। শুরু হলো জেরা। জানতে চাইল, খাবারগুলো কোথায়?

তখন পাহারায় ছিল চারটে ডোমা পিঁপড়ে। এক ডোমা বলল, জানি না তো! সর্দার বলল, খাবারের তো আর পা নেই যে হেঁটে হেঁটে চলে যাবে। আর পাখাও নেই। থাকলে হয়তো উড়ে যেতে পারত। চুরি না হলে গুদামের খাবার কমে কী করে? বলেন কী সর্দার! দিন-রাত পালা করে পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা এ কাজ করতেই পারি না।

তাহলে কি কেউ চুরি করেছে?

আমাদের জমানো খাবার চুরি করার সাহস কারো নেই। সবাই আমাদের ধারালো সাঁড়াশি ভয় পায়। গুদামে ঢুকতে গেলেই কুটি কুটি। তবুখাবারগুলো যে কীভাবে কমে যাচ্ছে! চুপ করো। খাবার চুরি হয়েই যাচ্ছে। আর বলে কিনা কারো সাহস নেই। রানি জানতে পারলে কী হবে একবার ভেবেছ?

না, এভাবে তো চলবে না। পরদিন থেকে বদলে গেল গুদামের পাহারাদার। এবার পাহারায় নামল দ্বিগুণ ডোমা পিঁপড়ে। তবুলাভ হলো না। প্রতিদিন খাবার কমেই যাচ্ছে।

পাহারা আরো বাড়ল। পাহারা বসল গুদামের ভেতরে। বাইরে। চারপাশে। তবুও… খবরটা আর চাপা থাকল না। রানি বলল, গুদামের খাবার কমছে কী করে? কারণ খুঁজে বের করো। দরকার হলে গোয়েন্দা লাগাও।

ব্যস, হাজির হয়ে গেল গোয়েন্দা ডোমা। গলায় দুরবিন। হাতে আতশকাচ তো আছেই।

কাজ শুরু করে দিল গোয়েন্দা ডোমা। দুরবিন দিয়ে দেখে নিল চারপাশ। দূরে আরেকটা পিঁপড়ে কলোনি দেখতে পেল। তারপর আতশকাচ দিয়ে গুদামের ভেতরে আলামত খুঁজতে লাগল। খাবারের স্তূপে। ঘরের দেয়ালে। মেঝেতে। যেখানে যেখানে আলামত থাকতে পারে। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ।

‘পেয়েছি পেয়েছি।’

ছুটে এলো ডোমা সর্দার। বলল, কোথায়? কোথায়? চোরটাকে এখনই আমার হাতে তুলে দাও। বেটাকে চুরির সাধ মিটিয়ে দিই।

শোরগোল শুরু করে দিল অন্য পিঁপড়েরাও। গোয়েন্দা ডোমা কিন্তু কারো কথায় কান দিল না। আবারও মনোযোগ দিল আলামত খোঁজায়। এক জায়গায় এসেই থেমে গেল সে। আর মুখ তুলে তাকালো। সামনে ডোমা সর্দার। আর তার চারপাশে পাহারাদার ডোমারা। সবাই সাঁড়াশির ধার পরীক্ষা করছে।

সর্দার বলল, দাও, চোরটাকে আমাদের হাতে তুলে দাও।

গোয়েন্দা বলল, চোর তো এখানে নেই।

তবে যে বললে পেয়েছ। চোরকে পেয়েছি এমনটা তো বলিনি। ডোমা সর্দার চেঁচিয়ে উঠল-তবে পেয়েছটা কী? পেয়েছি কিছুপায়ের ছাপ। এটা চোরেরই পায়ের ছাপ হবে হয়তো। গোয়েন্দা বলল। হয়তো! অনুমানের কথা বললে। অনুমান তো সবাই করতে পারে। এ জন্য তো তোমাকে ডাকা হয়নি। জলদি চোর ধরো।

খুব অপমান লাগল গোয়েন্দা ডোমার। সে বলল, দেখুন সর্দার, চোর ধরা আমার কাজ নয়। আমি একজন গোয়েন্দা। আমার কাজ অনুসন্ধান করা। ঠিক আছে। তুমি অনুসন্ধানই করো। আর বলো চোরটা কোথায়? আমরাই ওকে ধরে নেব।

অনুসন্ধানের আরো বাকি আছে। ডোমা সর্দার নরম গলায় জানতে চাইল, পায়ের ছাপ ছাড়া আর কিছুপাওয়া গেল কি? অনেকগুলো পায়ের ছাপ। ছাপগুলো একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে। থেমে গেছে!

পায়ের ছাপগুলো যেখানে এসে থেমেছে সেখানে একটা সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গ! সিঁধ কেটেছে?

ঠিক ধরেছেন সর্দার। তবে তো হয়েই গেল। সুড়ঙ্গের অপর মুখে গেলেই চোরকে পেয়ে যাব। চোর ধরা এখন খুবই সহজ। খুবই ছোট সুড়ঙ্গটা। ডোমারা কিছুতেই এই সুড়ঙ্গে ঢুকতে পারবে না। তাহলে উপায়?

আগে অনুসন্ধান শেষ করি। বাইরের দিকটা একবার দেখতে হবে। দেখি আর কোনো আলামত পাওয়া যায় কি না।

বাইরের দিকে এলো গোয়েন্দা ডোমা। গুদামের বাইরের দিকটা আরো একবার দেখে নিল। না, আর কোনো আলামত পাওয়া গেল না। তারপর আবার গলা থেকে দুরবিনটা তু লে নিল চোখে। আর দুরবিন দিয়ে দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। মাঝে মাঝে দুএকবার আতশকাচ দিয়েও খুঁজতে থাকে আলামত। চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল গোয়েন্দা ডোমা।

আরে! এগুলো তো সেই একই পায়ের ছাপ। যে ছাপগুলো গুদামের ভেতরে ছিল। এবার ছাপগুলোকে অনুসরণ করতে থাকে গোয়েন্দা। অনুসরণ করতে করতে চলে এলো একটা কলোনির সামনে। পিঁপড়ে কলোনি। এটা তো সেই কলোনি। দুরবিন দিয়ে এই কলোনিটাই দেখেছিল গোয়েন্দা ডোমা। এবার উল্টো দিকে ছুটতে লাগল গোয়েন্দা। ছুটতে ছুটতে আবার চলে এলো ডোমা কলোনিতে।

সর্দার ডোমা বলল, এভাবে ছুটে এলে যে?

খবরটা তাড়াতাড়ি দিতেই ছুটে এসেছি। বলল গোয়েন্দা ডোমা।

তাড়াতাড়ি বলো।

রানির কাছে নিয়ে চলো। বলছি।

রানির সামনে এলো গোয়েন্দা ডোমা। বলল, যারা আমাদের খাবার সাফ করে চলেছে তাদের সন্ধান পেয়েছি রানি মা। গর্জেউঠল রানি মা, কাদের এত বড় সাহস? জলদি বলো! খুদে পিঁপড়েরাই এ কাজ করেছে। গুদামের ভেতরে ওদের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। গুদামের ভেতরে একটা সুড়ঙ্গের মুখও পেয়েছি। মাটির নিচ দিয়েই আমাদের খাবারগুলো পাচার করে নিজেদের গুদাম ভরেছে।

হুঙ্কার দিয়ে রানি বলল, জলদি পুলিশ বাহিনীকে খবর দাও। ডোমা পুলিশের দল হাজির হলো। বলল, আদেশ করুন রানি মা!

খুদে পিঁপড়েদের কলোনি ঘিরে ফেলো। আমাদের খাবারগুলো উদ্ধার করে নিয়ে এসো। চোরগুলোকেও বেঁধে আনতে যেন ভুল না হয়।

দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ডোমা পুলিশ পিঁপড়েরা। কিন্তু খুদে পিঁপড়েদের কলোনি পর্যন্ত আর যেতে পারল না। খুদেরা আগে থেকেই তৈরি ছিল। মাঝপথ থেকে উল্টো তাড়া খেলো ডোমারা। পিলপিল করে ছুটে আসতে লাগল খুদে পিঁপড়েরা। পুরো কলোনির সব খুদে নেমে পড়েছে আক্রমণে।

ঢাল-তলোয়ার ফেলে জান নিয়ে ফিরেছে ডোমারা। ভয়ে তাদের হাত-পা-বুক কাঁপাকাঁপি।

রানি মা বুঝল, ওরা খুদে হলেও সংখ্যায় অনেক। ওদের সাথে লড়াই করে পারা যাবে না।

রানি ভাবতে লাগল কী করা যায়। অনেক ভেবে বলল, খুদে পিঁ পড়ে রানির কাছে দূত পাঠাও। আমরা ওদের শাস্তি চাই না। শুধুআমাদের খাবারগুলো ফেরত চাই।

দূত গেল খুদে পিঁপড়ে
রানির কাছে। ডোমা রানির চিঠি নিয়ে। আবার ফিরে এলো।
চিঠির উত্তর নিয়ে।
রানি বলল, চিঠি পড়ো।
দূত শুরু করল চিঠি পড়া।

প্রিয় ডোমা রানি, খুদে পিঁপড়ে রানি আমি। তাই বলে ছোট করে দেখবেন না। আমরা খুদে হলেও পরিশ্রমী। আমার শ্রমিক পিঁপড়েরা অনেক পরিশ্রম করে খাবারের খনি আবিষ্কার করেছে। আর সেই খনি থেকেই তারা খাবার সংগ্রহ করে চলেছে। আপনি যদি সেই খনির মালিক হয়ে থাকেন তবে তা সামলে রাখুন। ওটা আপনার দায়িত্ব। অন্যকে চোর বলবেন না। আমাদের খাবারগুলো আমরা সামলে রেখেছি। কীভাবে সামলে রেখেছি আপনার আহত সৈনিকদের দেখেই তা হয়তো বুঝতে পেরেছেন।

আমার সম্মান গ্রহণ করবেন।
খুদে পিঁপড়েদের রানি।

চিঠি পড়া শেষ। ডোমা রানি ভীষণ রেগে গেল। বলল, তোমাদের দিয়ে কিছুই হবে না। যাও, যেটুকুখাবার আছে ওগুলো সামলাও। বন্ধ করো সুড়ঙ্গের মুখ। আরো মজবুত করো গুদামের দেয়াল। আরো খাবার জোগাড়ে নেমে পড়ো বনে-বাদাড়ে।

কয়েক দিন পর…

ডোমাদের সাথে দেখা হলো খুদেদের। একই বনে। খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত সবাই। লড়াই তো দূরে থাক। কথা বলারই সময় নেই। শীত চলে এলো বলে।

আপনার মতামত দিন

Shopping Cart