বৈশাখী মেলা - ইকরিমিকরি । আমাদের স্বপ্নরাজ্য
বৈশাখী মেলা

বৈশাখী মেলা

লেখক : মাহাথির আরাফাত। শ্রেণি : দ্বাদশ

মেঘ ও ঢেউ। দুই ভাই-বোন মিলে বৈশাখের জন্য এই চরকি বানিয়েছে। মেঘ ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ঢেউ প্লেগ্রুপে পড়ছে।

বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। মেলা বসেছে নদীর ওপারে। দুই দিন চলবে। বাবার সাথে মেলা দেখতে এসেছে পিয়াল। চারদিকে হৈ-হুল্লোড় আর বৈশাখের গানে মুখরিত পরিবেশ। নৌকো দিয়ে নদী পার হতে হয়। এ জন্য নদীর দুই পাশেই অনেক ভিড়। কেউ আসছে, কেউ যাচ্ছে। সবার পরনে বৈশাখের নানা রঙের বাহারি পোশাক। পিয়াল পরেছে সাদা রঙের জামা। জামার বুকে, পিঠে লেখা নববর্ষের বিভিন্নকথা। বাবার হাত ধরে সে নৌকায় উঠে নদী পার হয়। মেলায় ঢুকেই সে অবাক হয়ে যায়! এত মানুষ চারপাশে! কত রকমের দোকানের সমারোহ।

প্রথমেই পিয়াল নাগরদোলায় চড়ে। বাবা তাকে কোলে নিয়ে বসেছেন। খুব মজা পেয়েছে সে। আবার একটু ভয়ও পাচ্ছিল। কারণ প্রথমবার নাগরদোলায় উঠেছে, তাই।

মেলার একপাশে বানর খেলা দেখাচ্ছে একটা লোক। বাবা পিয়ালকে নিয়ে সেখানে ছুটে গেলেন। বানরটা কত ভঙ্গি করছে তার শেষ নেই। লোকটা যা বলছে বানরটা তা-ই করছে। পিয়াল বানরের ভঙ্গি দেখে কখনো কখনো খিলখিল করে হেসে ওঠে।

মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে মেলার উত্তর পাশে। বৈশাখী গানসহ বাংলাদেশের বিভিন্নলোকগান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। গান শুনতে আসনে বসে পড়ে তারা। গান চলছে, ‘রমনার বটমূলে কথা হবে প্রাণ খুলে, জানিয়ে দিলাম আমি তোমাকে।’

পিয়াল বাবাকে বলে, রমনা কী বাবা? বাবা উত্তর দেন, রমনা হচ্ছে ঢাকার একটি অনেক বড় পার্ক। সেই পার্কেঅনেক বড় মেলা হয়। অনেক অনেক মানুষ জমায়েত হয় সেখানে।

মাটির তৈরি জিনিসে ভরে গেছে মেলার একপাশ। সবচেয়ে বেশি আছে মাটির পুতুল। মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, গরু, সাপ, বানর। আছে ছোটদের খেলার জন্য হাঁড়ি-পাতিল, ঢেঁকি, গেলাস, চামচ, মাটির ব্যাংক ও আরো কত কী। পিয়াল একটা বড় মাটির ব্যাংক আর দুটি পুতুল কেনে। তার সে কী আনন্দ!

মেলা ঘুরে দেখতে দেখতে পিয়ালের ক্ষুধা লাগে? খুব। কড়ইগাছের নিচে বসে জিলাপি ভাজছে একজন। গরম গরম মচমচে জিলাপি। রোদের আলোয় সোনার মতো চকচক করছে সেগুলো। পিয়ালের জিভে পানি এসে যায় প্রায়। বাবাকে নিয়ে জিলাপি খায় সে। তারপর খায় পান্তাভাত, সাথে ইলিশ ভাজা। বাবা বলেছেন, এটা নাকি পহেলা বৈশাখের খাবার।

বেলা বাড়ছে। সেই সাথে ছোট ছেলে-মেয়েদের ভিড়ও বাড়ছে। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই আসছে বৈশাখী মেলায়। সবার মুখে হাসি। পিয়ালের মুখেও হাসি। বাবা একটা বাঁশি কিনে দিয়েছেন তাকে। সেই বাঁশি বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফিরে আসে। এমন চমৎকার একটা দিনের কথা পিয়াল কখনো ভুলবে না।

আপনার মতামত দিন

Shopping Cart